বাংলার ইতিহাস
মূল নিবন্ধ: বাংলার ইতিহাস
বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয় :
১.
প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০ - ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ) – চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান এই সময়কার লিখিত নিদর্শন। এই সময় আমি, তুম ইত্যাদি সর্বনাম এবং ইলা, -ইবা, ইত্যাদি ক্রিয়াবিভক্তির আবির্ভাব ঘটে। ২, মধ্য বাংলা (১৪০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) – এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। শব্দের শেষে "অ" ধ্বনির বিলােপ, যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন, ফার্সি ভাষার প্রভাব এই | সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। কোনাে কোনাে ভাষাবিদ এই যুগকে আদি ও অন্ত্য এই দুই ভাগে ভাগ করেন।
৩. আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে-বর্তমান) – এই সময় ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপণ ঘটে, যেমন তাহার ত্যর, করিয়াছিল – করেছিল |
প্রাচীন যুগ [সম্পাদনা] আরও তথ্যের জন্য দেখুন: চর্যাপদ খ্রিষ্ট্ৰীয় দশম দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী
সময়কালে মাগধী প্রাকৃত ও পালির মতাে পূর্ব মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ থেকে বাংলা ও অন্যান্য
পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে।[১৯] এই অঞ্চলে কথ্য ভাষা প্রথম সহস্রাব্দে মাগধী প্রাকৃত
বা ধর্মাগবী ভাষায় বিবর্তিত হয়। ২০১২ খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর শুরুতে উত্তর ভারতের অন্যান্য প্রাকৃত
ভাষার মতােই মাগধী প্রাকৃত থেকে অপভ্রংশ ভাষাগুলির উদ্ভব ঘটে। পূর্ব অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ
নামক পূর্ব উপমহাদেশের স্থানীয় অপভ্রংশ ভাষা'গুলি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় বিবর্তিত হয়,
যা মূলতঃ ওভিয়া ভাষা, বাংলা-অসমীয়া ও বিহারী ভাস্বাসমুহের জন্ম দেয়। কোনাে। কোনাে ভাষাবিদ
৫০০ খ্রিষ্টাব্দে এই তিন ভাষার জন্ম বলে মনে করলেও ২2] এই ভাষাটি তখন পর্যন্ত কোনাে সুস্থির রূপ
ধারণ করেনি; সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষিক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল। যেমন, ধারণা
করা হয়, আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে মাগবী অপভ্রংশ থেকে অবহটুঠের উদ্ভব ঘটে, যা প্রাক-বাংলা
ভাষাগুলির সঙ্গে কিছু সময় ধরে সহাবস্থান করছিল। ২৩ চৈতন্য মহাপ্রভুর যুগে ও বাংলার
নবজাগরণের সময় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃত ভাষা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিল।[24] সংস্কৃত থেকে
যে সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় যােগ করা হয়, তাদের উচ্চারণ অন্যান্য বাংলা রীতি মেনে পরিবর্তিত
হলেও সংস্কৃত বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়।
মধ্যযুগ : বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপােষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগােষ্ঠী। ফার্সির পাশাপাশি
বাংলাও বাংলার সালতানাতের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিলাে এবং ব্যাপক হারে ব্যবহার হতাে।
এছাড়াও প্রত্ন বাংলাছিলাে পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা।
আধুনিক : ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর
ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা
সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মবে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। ২০] আধুনিক বাংলা শব্দভাণ্ডারে মাগধী
প্রাকৃত, পালি, সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ভাষা এবং অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ সহ অন্যান্য ভাষা পরিবারের
শব্দ স্থান পেয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ভাওয়াল জমিদারীতে কর্মরত অবস্থায় পর্তুগিজ খ্রিস্টান পুরােহিত
ও ধর্মপ্রচারক ম্যানুয়েল দ্য। আসুম্পসাও সর্বপ্রথম ভােকাকােলারিও এম ইডিও মা বেঙ্গালা,
এ পোর্তুগুয়েজ ডিভিডিভে এম মুয়াস পাতেস (পর্তুগিজ: Vocabolario em idioma Bengalla,
e Portuguez dividido em duas partes) নামক বাংলা ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন।
২৩ ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড নামক এক ইংরেজ ব্যাকরণবিদ আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ
(ইংরেজি এ Grammar of the Bengal Language) নামক গ্রন্থে একটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ রচনা
করেন, যেখানে হাপাখানার বাংলা হরফ প্রথম ব্যবহৃত হয়। ২] বাঙালি সমাজসংস্কারক রাজা
রামমােহন রায়২৮] ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে এমর অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ (ইংরেজি Grammar of the Bengali Language) নামক একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন।
No comments